মিলন কর্মকার রাজু,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)।।
পটুয়াখালীর পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার তুলাতলী ২০ শয্যা হাসপাতালে একজন রোগীর সেবায় নিয়োজিত আছেন একজন ডাক্তার, পাঁচজন নার্স ও একজন ওয়ার্ড বয়। হাসপাতালে নেই জরুরী ঔষধ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ। গত ৩ ও ৪ মার্চ বিকালে হাসপাতালে একজন রোগীই ভর্তি পাওয়া যায়। এ কারনে হাসপাতালের অভ্যন্তরে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা পর্যটক ও কুয়াকাটা পৌরসভাসহ পাশ্ববর্তী মহিপুর থানা, লতাচাপলী,ধুলাসার ও ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী এ হাসপাতালের উদ্ধোধন করেন। উদ্ধোধন পরবর্তী ৬ মাস তিন-চার ডাক্তার সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করলেও এরপর থেকে ডাক্তাররা বদলী হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা এখন বন্ধের পথে।
হাসপাতাল সূত্রে জানাযায়, চার জন কনসালটেন্টের পদ শূণ্য প্রায় অর্ধযুগ। দুই ডাক্তারের মধ্যে ডা. মনিরুজ্জামান দুই মাসের প্রশিক্ষনে এখন ঢাকায়। একমাত্র ডা. আরিফুর রহমান এখন গোটা হাসপাতালের দায়িত্বে। নার্স পাঁচজন থাকলেও নেই প্রধান সহকারি, ফার্মাসিষ্ট,এমটি ল্যাব। ল্যাব টেকনেশিয়ান না থাকলেও কোন ধরনের কাজ ছাড়াই হাসপাতালে আছেন র্যাব এ্যাটেনডেন্ট। সুসজ্জিত ওটি রুম ও ল্যাব থাকলেও তা তালবদ্ধ।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়,রোগীন অভাবে হাসপাতালের বেডগুলো ভেঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ডাক্তার কক্ষ, ল্যাব, ওটি রুমসহ প্রতিটি রুমে ময়লা আবর্জনার স্তুপ ও দড়জার তালায় জং ধরে আটকে আছে। এ অবস্থা চলছে বছরের পর বছর ধরে। রোগী না থাকায় নার্স, ওয়ার্ড বয় ও অফিস সহকারীরা গল্প করে সময় কাটাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, ডাক্তার না থাকায় জরুরী প্রয়োজনে তারা তুলাতলী হাসপাতালে না গিয়ে কলাপাড়ায় গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অধিকাংশ সময় এ হাসপাতাল থাকে রোগী শূণ্য। এ কারনে হাসপাতালে সীমানার মধ্যে হকাররা জরুরী মালামাল রাখছে। কেউ কেউ হাসপাতালের মাঠে নিজেদের মালামাল শুকিয়ে ব্যবসা ক্ষেত্র বানিয়েছে। চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে এখানে আসলে আরও দূর্ভোগ পোহাতে হয়।
হাসপাতালে সিনিয়র ষ্টাফ নার্স মাকসুদা বলেন , এখানে রোগীর রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই তাই রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কলাপাড়া কিংবা পটুয়াখালী রেফার করা হয। এ কারনে ইনডোরে রোগী ভর্তি কম থাকে।
হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুর রহমান বলেন, তিনিই একমাত্র ডাক্তার যাকে ২৪ ঘন্টা উিউটি করতে হয়। তাছাড়া এখানে ভর্তি রোগীর উন্নত চিকিৎসার তেমন ব্যবস্থা নেই। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। একারণে প্রাথমিক চিবিৎসা দিয়েই অনেক রোগীকে কলাপাড়া কিংবা পটুয়াখালী হাসপাতালে রেফার করা হয়। এ কারণে ভর্তি রোগী কম থাকে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আঃ বারেক মোল্লা বলেন, পর্যটন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় প্রায়ই দূর্ঘটনার শিকার রোগীদের মুমূর্ষ অবস্থায় ২২ কিলোমিটার দূরে কলাপাড়া হাসপাতাল ও ৭০ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী হাসপাতালে যাওয়ার পথে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।